দাওয়াহ বিভাগের ২১ বছর : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ
হাটি হাটি পা পা করে দাওয়াহ বিভাগ এখন ২১ বছরের পুরো দস্তুর যুবক।হ্যা, আমরা কথা বলছি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের কথা। ১৯৯৪ সালে শরীয়াহ অনুষদের যে দুটি বিভাগকে সরকারি অনুমতি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে দাওয়াহ বিভাগ একটি।
দাওয়াহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক পথ চলা শুরু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ঐ বছরের অটাম সেমিস্টারে অনার্স প্রোগ্রামের যাত্রা। চার বছরের মাথায় ২০০৩ সালেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC) এর পক্ষ থেকে মাস্টার্স প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয়া হলে এরপর থেকে অনার্স ও মাস্টার্স দুই প্রোগ্রামই সুন্দরভাবে চলে আসছে আজ অবদি।
দাওয়াহ বিভাগের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন, প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দীন হাফিজ। এরপর যথাক্রমে ড. আব্দুস সালাম আজাদী, ড. আ.ন.ম কুতুবুল ইসলাম নোমানী, ড. আব্দুল্লাহ ফারুক, প্রফেসর ড. শাকের আলম শওক, জনাব মো. শাহ জালাল, ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম, প্রফেসর ড. শাফী উদ্দীন আল মাদানী। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক।
দাওয়াহ বিভাগের প্রথম প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী পরপর দুবার এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই কেবল পার্লামেন্টের এমপি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. গিয়াস উদ্দীন হাফিজ এবং ড. আব্দুস সালাম আজাদী স্যারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দাওয়াহ বিভাগ প্রথমে বাংলাদেশের সকলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। শত শত মেধাবী ভীড় জমায় উক্ত বিভাগে। উনাদের দেখানো পথে বাকী চেয়ারম্যানগণও দাওয়াহ বিভাগকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন আঙ্গিনায় দাওয়াহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সুনাম কেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু ছাত্র দেশ বিদেশের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন বেশ কয়েকজন ছাত্র/ছাত্রী। বিদেশী দূতাবাসসহ সরকারী বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে দাওয়াহ বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা তাদের মেধার স্বাক্ষর দেখিয়ে যাচ্ছে।
২১ বছরে দাওয়াহ বিভাগের যা ছিল তা সবই অর্জন। কোনো কিছু হারানোর ছিল না। দাওয়াহ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যানদের সবাই আজও জীবিত আছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন হাফিজ স্যার, শরীয়াহ অনুষদের ডীন হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করে এখন কুরআনিক সাইন্স বিভাগের প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ড. আব্দুস সালাম আজাদী স্যারকে চিনেন না এমন লোক কম আছেন। তাঁর অনেক পরিচয় আছে তারমধ্যে বড় পরিচয় হলো তিনি বর্তমান কালের সেরা দাঈ ইলাল্লাহদের একজন। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছে তিনি অতি প্রিয় ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি লন্ডনে স্বপরিবারে আছেন।
ড. কুতুবুল ইসলাম নোমানী স্যার আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে। তিনি সেখানে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করছেন। ড. আব্দুল্লাহ ফারুক আছেন সউদী অ্যাম্বাসিতে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা হিসেবে। ড. শাকের আলম শওক আছেন একই বিভাগের প্রফেসর হিসেবে। ড. শাফী উদ্দীন মাদানী স্যার বর্তমানে ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শাহ জালাল, ড. আবুল কালাম শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন সুনামের সাথে।
IIUC ক্যাম্পাসে দাওয়াহ বিভাগের আলাদা সুনাম আছে। দাওয়াহ বিভাগকে বলা হয়ে থাকে সবচাইতে ডায়নামিক বিভাগ। এ বিভাগের ছাত্র/ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক অর্জনের পাশাপাশি অন্যান্য ইভেন্টেও চমৎকার সফলতা শো করে যাচ্ছে।
দাওয়াহ বিভাগই সর্বপ্রথম বিভাগ যে কিনা তার ছাত্রদের জন্য মাসিক স্কলারশিপ স্কিম চালু করেছে। দাওয়াহ বিভাগের মেধাবী ছাত্রদের জন্য চালু করা হয়েছে মেরিট অ্যাওয়ার্ড। এটিও প্রথম উদ্যোগ। দাওয়াহ বিভাগের তত্বাবধানে আলিম পরীক্ষার পর পরই ফ্রি আরবী শিক্ষা কোর্সের আয়োজন করা হয়। দাওয়াহ বিভাগের সৃজনশীল প্রকশনাগুলো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ বছরের ডায়েরী ক্যালেন্ডার সকলেই লুফে নিয়েছেন। বই মেলার মতো বিশাল আয়োজন ছিল দাওয়াহ বিভাগের গেল বছরে সেরা অর্জন। একদিনের বই মেলায় প্রায় আট লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিলো।
দাওয়াহ বিভাগ ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আরো সফল হবে প্রত্যাশাই রইল মহান রবের নিকট......